মহামারি কালের কঠিন বাস্তবতায় দেশ থেকেই বের হতে চাননি তিনি। তাই বাংলাদেশ দলের সঙ্গেও আর কাজ করা হয়নি তাঁর। বাইরে গেলেই যে ফিরে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার ১৪ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিনের নিয়ম তাঁর নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে! তবে বাংলাদেশের খেলা যখন এবার ডেনিয়েল ভেট্টোরির দেশেই, তাই কুইন্সটাউনে পাঁচ দিনের অনুশীলন শিবিরের প্রথম দিন থেকেই মেহেদী হাসান মিরাজদের সঙ্গী এই স্পিন বোলিং উপদেষ্টা। যদিও তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়েছে বেশ আগেই। তাই শুধু এই সফরের জন্যই নতুন করে এই সাবেক বাঁহাতি স্পিনারের সঙ্গে চুক্তিতে গিয়েছে বিসিবি। যে চুক্তি অনুযায়ী ভেট্টোরির দিনভিত্তিক পারিশ্রমিকও নির্ধারিত হয়েছে নতুন করে। চুক্তির নতুনত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘ভেট্টোরির সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত (গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে)। ওই সময়ের মধ্যে উনি কত দিন কাজ করবেন, চুক্তিতে নির্দিষ্ট ছিল সেটিও। তবে আসরটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পুরো ১০০ দিন ওনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। যেহেতু পুরোটা সময় আমরা তাঁকে ব্যবহার করিনি, তাই আলোচনার মাধ্যমে পারিশ্রমিকের নতুন এক অঙ্ক নির্ধারণ করে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি সমঝোতায় গিয়েছি। আপাতত এই নিউজিল্যান্ড সফর পর্যন্ত অ্যাসাইনমেন্ট আছে। এরপর সময়-সুযোগ হলে আমরা তাঁর সার্ভিস নেব।’ এর আগে তাঁর সার্ভিস নিতে গিয়ে কর কেটেও দিনপ্রতি আড়াই হাজার ইউএস ডলার গুনতে হয়েছে বিসিবিকে। যা ভেট্টোরিকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি কোচের আসনেও বসিয়েছে। নতুন চুক্তিতে সেই অঙ্কটি বেড়েছে নাকি কমেছে? এ প্রশ্নের জবাবে প্রথমে একটু রাখঢাকই করতে চাইলেন নিজাম উদ্দিন, ‘বাড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।’ অঙ্কটি প্রকাশ না করলেও পরে অবশ্য তিনি ভেট্টোরির দিনভিত্তিক পারিশ্রমিক কমার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন, ‘মেয়াদ যেহেতু শেষ, আমরা দর-কষাকষি তো করতেই পারি। সেটি আমরা করেছিও। অনেক বড় অঙ্কই কমেছে।’ বিসিবিরই একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক দেড় হাজার ইউএস ডলার পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ভেট্টোরি। তবে এপ্রিলের শ্রীলঙ্কা সফরে যেহেতু তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই নতুন স্পিন বোলিং কোচও খুঁজতে হচ্ছে বিসিবিকে, ‘এটিই তাঁর শেষ অ্যাসাইনমেন্ট, বিষয়টি এ রকম নয়। উনি যেহেতু বিশেষজ্ঞ কোচ, তাঁর সার্ভিস আমরা যেকোনো সময় নিতেই পারি। ওনাকে না পাওয়া গেলে তো নতুন কাউকে নিতেই হবে। আমাদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে ওনার সমস্যা হলো ফিরে গিয়েই তাঁকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হচ্ছে পরিবার থেকে দূরে থেকে। এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওই চ্যালেঞ্জ যখন থাকবে না, তখন আবারও আমাদের কার্যক্রমে তাঁকে দেখতে পারেন।’ বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই সিরিজ ও সফরভিত্তিক কাজ করে আসছিলেন ভেট্টোরি। তাঁকে ফাঁকা সময়ে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েও। যদিও প্রধান নির্বাহীর দাবি, সে রকম পরিকল্পনাও তাঁদের ছিল। এখন থেকে নতুন কোনো কোচের ক্ষেত্রে এই ফর্মুলাই অবলম্বনের কথাও বললেন তিনি, ‘এখন থেকে আমরা বিশেষজ্ঞ কোচ নিলে এমনভাবে নেব, যাতে আমরা তাঁকে জাতীয় দলেও কাজে লাগাতে পারি, আবার অন্য কার্যক্রমেও যেন যুক্ত করতে পারি। শুধু জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে পড়ে না থেকে অন্য স্পিনারদের নিয়েও কাজ করানো গেলে সেটি আমাদের জন্য আরো কার্যকরী হবে বলে মনে করি। ভেট্টোরিকে নিয়েও আমাদের সে রকমই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু চুক্তির সময় ও কভিডের কারণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।’