জাপানে দীর্ঘদিন ছিলেন কাওসার তালুকদার। দেশে এসে পুরান ঢাকার লালবাগের নূর ফাত্তাহ রোডে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তালুকদার কনভেনশন সেন্টার নামে শুরু করেন কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবসা। কয়েক বছর বিয়ের সানাই আর লাল-নীল আলোকসজ্জায় বেশ জমজমাট ছিল এ ব্যবসা। কিন্তু কমিউনিটি সেন্টারের সেই আলো নিভে গেল তৃতীয় বছরে এসে, করোনার ধাক্কায়।
করোনার কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হারিয়েছেন এক কোটি টাকার পুঁজি। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাই পরিবার নিয়ে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।
এটির পাশেই সাগুন কমিউনিটি সেন্টার। এই কমিউনিটি সেন্টারটিও কোনোরকমে ঠিকে আছে। গত নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি অনুষ্ঠান হয়েছে। ভবন ভাড়া না হওয়ায় এ কমিউনিটি সেন্টার এখনো কোনোরকমে টিকে আছে সুদিন ফেরার আশায়।
তালুকদার বা সাগুনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছোট–বড় সব কমিউনিটি সেন্টারের অবস্থা প্রায় একই। জমজমাট বিয়ের বাজারটি করোনায় থাবায় হঠাৎই যেন চুপসে গেল। অথচ করোনার আগে বিয়ের এ মৌসুমে কমিউনিটি সেন্টারে জায়গা পাওয়ায় ছিল দায়। বিয়ের পাত্র-পাত্রী ও তাঁদের পরিবারকে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতে দিনের পর দিন ঘুরতে হতো। এখন গ্রাহকের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন কমিউনিটি সেন্টারের মালিক ও কর্মচারীরা। একদিকে নেই গ্রাহক, অন্যদিকে আছে বাড়িভাড়া ও পরিচালন খরচের চাপ। শুধু কমিউনিটি সেন্টার নয়, করোনার আঘাত লেগেছে বিয়ের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য খাতেও। তাতে কাজ হারিয়েছেন মৌসুমি কর্মী। আর ব্যবসা বন্ধের শঙ্কায় আছেন অনেক ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশের বিয়ের বাজার কত বড়, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো গবেষণা নেই। তবে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা গত বছর এই সামাজিক নানা অনুষ্ঠান আয়োজন বিষয়ে একটি জরিপ করেছিল। সেই জরিপের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যত ধরনের অনুষ্ঠান (ইভেন্ট) আয়োজন করা হয়, তার ৯০ শতাংশই বিয়ের। এসব অনুষ্ঠানে শুধু খাওয়া বাবদ বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। আর সাজসজ্জা ও অন্যান্য রসদের বাজারটি বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের হল বা ভেন্যু ভাড়া বাবদ বছরে খরচ হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানের বাজারটি বছরে ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার বলে তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণত শীতকাল বিয়ের মৌসুম। কিন্তু এ বছর বিয়ের বাজারের চিত্রই ভিন্ন। ডিসেম্বর শেষে জানুয়ারি মাসও যায় যায় করছে, কিন্তু অধিকাংশ কনভেনশন হল ও কমিউনিটি সেন্টারে জ্বলছে না ঝলমলে বিয়ের বাতি।