গত ৪৫ দিনে রাজারহাট উপজেলার দুটি ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ভারি বর্ষণ এবং উজানের পানির প্রবাহ তিস্তা নদীর তীর ভাঙনের সূত্রপাত করে, যার ফলে নদীর তীরে বসবাসকারী বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
নদীভাঙনে শত শত বিঘা ফসলি জমি, গাছপালা, পুকুর, মসজিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
৪৩ কিলোমিটার নদীর তীরগুলোর মধ্যে মাত্র দুই কিলোমিটার রক্ষা করা হয়েছে এবং বাকি এলাকাগুলো অরক্ষিত রয়েছে।
ফলে প্রতিবছর বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলি জমি ভেসে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও মসজিদ-মন্দির ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বলে জানান তারা।
বর্তমানে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ছয় কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে নদীর তীর রক্ষার চেষ্টা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সম্প্রতি তিস্তা নদীতে বগুড়াপাড়া, রামহোরি, কিতাবগাঁও ও বুড়িরহাটের মোট ১৭টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।
নদী ভাঙ্গন থেকে নিজেদের বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কিতাব খান গ্রামের মৃত বন্দে আলীর ছেলে মন্ডল আলী বলেন, “আমরা তিস্তার তীরে থাকি। কিন্তু নদী ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কোন বিকল্প নেই। আমি জানি না কিভাবে আমরা এখানে টিকে থাকব। আমরা এখানে কতদিন টিকে থাকতে পারব তা আমাদের কোন ধারণা নেই।”
ঘড়িয়ালডাঙ্গার রামহোরি গ্রামের মেহেরন বলেন, “নদী আমার ফসলি জমিসহ সব সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছে। তিস্তা নদীতে ভাঙনের আশঙ্কায় ৫ লাখ টাকার গাছ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। নদী যদি আমার বাড়ি ভেসে যায়, তাহলে আমরা গৃহহীন হয়ে যাব।”
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন জানান, নদীভাঙন থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত ব্যবস্থা অপ্রতুল।
যোগাযোগ করা হলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা তিস্তা নদীর বেশ কিছু পয়েন্ট রক্ষা করেছি। এখন নতুন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নদীর তীর ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। ”
মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তিস্তা নদীর প্রশিক্ষণ সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।