মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদের ফিরিয়ে দেব এবং তা থেকে পুনরায় তোমাদের বের করব।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৫৫)
তাফসির : আগের আয়াতে মুসা (আ.)-এর জবানে মাটি থেকে উৎপন্ন আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে মানবজীবনে মাটির প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাটির প্রয়োজন। মাটিবিহীন মানুষের জীবন কল্পনা করা যায় না। মানুষের জন্মের ক্ষেত্রে মাটির উপাদান বা মাটির ভূমিকা আছে। মানুষের বেঁচে থাকতে মাটির প্রয়োজন এবং মানুষ মারা গেলে এই মাটিতে সমাহিত হয়। আর এই মাটি থেকেই কিয়ামতের দিন মানুষকে উত্থিত করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে অনিবার্যভাবে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। এক. জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। এটি ইহকাল। দুই. মৃত্যু থেকে কিয়ামত অবধি। এটি বরজখের জীবন। তিন. কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত হওয়া। এটি আখিরাতের অনন্ত জীবন। আলোচ্য আয়াতের দৃষ্টিতে এ তিনটি পর্যায় অতিক্রান্ত হবে এ জমিনের ওপর। জমিন থেকে তাদের শুরু। তারপর মৃত্যুর পর জমিনেই তাদের ঠাঁই। আর যখন সময় হবে তখন এখান থেকেই তাদের পুনরুত্থান ঘটানো হবে। আলোচ্য আয়াত অন্য একটি আয়াতের সাদৃশ্যপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) বলেন, সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে এবং সেখানেই তোমরা মারা যাবে। আর সেখান থেকেই তোমাদের বের করা হবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৫) মানুষ যেন এই আয়াতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে, তাই মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার সময় আলোচ্য আয়াত পাঠ করার কথা আছে। মৃত ব্যক্তির দাফনে শরিক সবাই নিজের উভয় হাতে কবরে তিনবার মাটি দেওয়া মুস্তাহাব। প্রথমবার মাটি ঢালার সময় বলবে ‘মিনহা খালাকনাকুম’, দ্বিতীয়বার মাটি ঢালার সময় বলবে ‘ওয়া ফিহা নুঈদুকুম’, তৃতীয়বার ঢালার সময় বলবে ‘ওয়া মিনহা নুুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। সৌন্দর্য ও গৌরব করে কবরের ওপর ঘর বানানো হারাম। কবরকে শক্ত করার জন্য বানানোও মাকরুহ। ঘরে মৃত ব্যক্তি দাফন করা মাকরুহ। কারণ ঘরে দাফন করা নবীদের বৈশিষ্ট্য। মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মৃতুবরণ করেছে, সেখানেই দাফন করা মুস্তাহাব।