মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সহিংসতা চলছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানুষ প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত ৭২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় কমপক্ষে তিন হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।
জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ধীরে ধীরে আত্মরক্ষা ও পাল্টা জবাব দেওয়ার পথে এগোচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার ঘরে বানানো অস্ত্র, গুলতি আর পাথর।খুবই সাদামাটা অস্ত্র নিয়ে সামরিক বাহিনীর মোকাবিলায় নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। হাতে বানানো বন্দুক, পাথর, গুলতি, এয়ারগানের মতো অস্ত্র বানাতে হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে সেসব উপকরণই ব্যবহার করছেন তারা।
এসব অস্ত্র যতটা আক্রমণের জন্য, তার চেয়ে বেশি আত্মরক্ষামূলক। তাদের এয়ারগান কোনো মারণাস্ত্র নয়। বিক্ষোভকারীরা এটা ব্যবহার করে মূলক সেনাদের এগিয়ে আসার গতি কিছুটা ধীর করার চেষ্টা করে। পালানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে ধোঁয়া-বোমা ব্যবহার করা হয় যা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সামনে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ২৭ মার্চ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ দমনাভিযান। এদিন ১৫০ জনকে হত্যা করা হয়। ইয়াংগনের শহরতলী থারকেতায় কো থি হা নামের এক বিক্ষোভকারীর বরাত দিয়ে ২৭ মার্চের হত্যাকাণ্ডের পর তারা ২০ জনের একটি দল গড়ে তুলেছেন। কো থি হা বলেন, অভ্যুত্থানের পর আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পথেই ছিলাম। কিন্তু যখন তারা এতগুলো মানুষকে হত্যা করল, তখন আর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে এগুনো যায় না। আমাদের পাল্টা জবাব দিতে হবে।
উদ্ভাবনী এসব অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও আন্দোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক শব্দ চালাচালি করছে। যেমন ‘বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে’ এর মানে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে, ‘অতিথিদের বিরিয়ানি দেওয়া হচ্ছে’ এর মানে সেনাদের লক্ষ্য করে বন্দুক ছোড়া হচ্ছে। ‘বিগ বিরিয়ানি’ অর্থ হলো পাল্টা হামলা হিসেবে একটি আগুন দেওয়ার ঘটনা।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির ক্ষমতা দখল করে অং সান সু চিসহ অন্যান্য নেতাদের বন্দি করেন সামরিক শাসন জারি করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সব নেতাদের মুক্তির দাবি ও সামরিক শাসনের পতন ঘোষণা করে বিক্ষোভে নামেন হাজারো মিয়ানমারবাসী।