অভাবিত শান্ত মাহমুদ উল্লাহ! ও রকম পরিস্থিতিতে তিনি প্রচণ্ড বকাঝকা করেন সাধারণত। কখন? যখন আগের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমান অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ মুঠোয় নিয়ে এসেছেন, তখনই কিনা শেষ ওভারের প্রথম বল লং হপ দিয়ে ছক্কা খেলেন শেখ মেহেদী! মিড অফ থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে মেহেদীর নার্ভ যেন শুষে নিতে চাইলেন মাহমুদ। নো বল করা মেহেদীকেও বকাঝকা করেননি তিনি।
এটুকু পড়ে মনে হতে পারে, মাহমুদ উল্লাহ বুঝি তাঁর ছবির মতো নন, বরং বদমেজাজি। করোনার সময়ে অবসর বসে না থেকে অনলাইনে এমবিএ-ও করে ফেলেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদর্শ ক্রিকেট পরিবারের নেতা। কিন্তু ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদ তো আর একালের ক্রিকেটার নন। যখন অধিনায়ক কিংবা টিমমেটরাও মাঠের ভুলকে স্রেফ একটি ভুল বলে ভাবতেন না, খুব শাসাতেন। সেই শাসন ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়ক মাহমুদকেও করতে দেখা গেছে। গতকালই তো একটি রান আউটের সুযোগ ফসকাতে ক্রিকেটীয় দীক্ষার ‘চর্চা’ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই তিনিই স্নায়ুক্ষয়ী শেষ ওভারে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা! সম্ভবত ধরে নিয়েছিলেন, একটি ছক্কায় ম্যাচের রং যদি সামান্য বদলায়ও, বকাঝকা করে তরুণ মেহেদীকে আরো ঘাবড়ে দেওয়ার কোনো মানে নেই। এই ‘অ্যাটিচুডে’র সুফল মাহমুদ পেয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের ট্রফিটা তাঁর হাতেই উঠছে। মাঠের যে হালচাল, তাতে এই জয় ৫-০ হলেও আর অবাক হওয়ার কারণ নেই।
এটা তো সিরিজ নিষ্পত্তির শেষ ওভারের গল্প। শুরু থেকেই ধরা যাক। জিম্বাবুয়েতে আচমকা টেস্ট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে দেশের ক্রিকেট সমাজের কাছে ‘দোষী’ সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। এই সিরিজে গোলমাল হলে কী হতো, কে জানে। স্পষ্টতই মাহমুদের ওপর চাপ ছিল। গতকাল ম্যাচ হারলে দুটি রান আউটের অংশীদার হওয়ার সমালোচনা সইতে হতো তাঁকে।
তবে ক্যাপ্টেনকে অত ভাবলে চলে না। নিজের ক্রিকেটীয় ভাবনাকে তাই মাহমুদ উল্লাহ নিয়ে এসেছেন বর্তমানে। জিম্বাবুয়ে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘অতীত ফিরিয়ে আনা যায় না। আর ভবিষ্যতে কী হবে, অত ভাবি না। যা আছে, তাই নিয়ে ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।’ ৫৩ বলে ৫২ রানে টি-টোয়েন্টির দাবিপূরণের পক্ষে যথেষ্ট নয়। তবে ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায়ই কিন্তু ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ। মিরপুরের দুর্বোধ্য উইকেটে আসলে রান করাই যুদ্ধজয়ের সমান।
এ তো গেল তাঁর ব্যক্তিগত অবদানের ব্যাপার। অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহকে দেখুন। বোলিং পরিবর্তন কিংবা ফিল্ড প্লেসিং—কোথাও ফাঁকফোকর নেই। যেন ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের ‘রিমোট’টা বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতে! রান আটকানো কিংবা উইকেট নেওয়ার জন্য যখন যাঁকে আক্রমণে এনেছেন, ফল পেয়েছেন। অবশ্য মাঠের অধিনায়কত্বের পরীক্ষায় আগেই পাস করেছেন মাহমুদ।