যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) নতুন ধরন (স্ট্রেইন) আরও প্রাণঘাতী হতে পারে বলে তথ্যপ্রমাণে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী “বরিস জনসন” এ কথা জানিয়েছেন।
এই ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে বড় রকমের অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এরই মধ্যে আশা করা হচ্ছে, টিকা করোনাভাইরাসের এই ধরনের বিরুদ্ধেও কাজ করবে।
পুরোনো ও নতুন ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যকার মৃত্যুহার তুলনা করেছেন গণিতবিদরা। ভাইরাসের নতুন ধরনটি আগেরটির চেয়ে আরও বেশি প্রাণঘাতী হওয়ার এই ইঙ্গিত তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া উপাত্ত থেকে জানা গেছে। নতুন ধরনটিতে সংক্রমণের ঘটনা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া অপর দুটি ধরন নিয়ে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটির চেয়েও বেশি উদ্বেগ রয়েছে। এই ধরনগুলোতে বর্তমান আবিষ্কৃত টিকা তেমন কার্যকর না–ও হতে পারে।
স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্স, যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা
এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন আগেরটির চেয়ে শুধু যে দ্রুতই ছড়াচ্ছে তা নয়, বরং কিছু তথ্যপ্রমাণে জানা গেছে, লন্ডন ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে প্রথম সন্ধান পাওয়া এই ধরন আরও বেশি মানুষের মৃত্যুর সঙ্গেও মিল থাকতে পারে। এ নিয়ে ভীষণ চাপে রয়েছে এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, দ্য লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও ইউনিভার্সিটি অব এক্সটার নতুন ধরন কতটা প্রাণঘাতী, তা নির্ণয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা তাঁদের পর্যালোচনা শেষে উপসংহারে বলেছেন, নতুন ধরন আগেরটির চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী হওয়ার ‘সম্ভাবনা বাস্তবভিত্তিক’। তবে এটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্স বলেছেন, যেসব উপাত্ত পাওয়া গেছে সেগুলো এখন পর্যন্ত জোরাল নয়। অবশ্য তিনি বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, এ ধরনটিতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা রয়েছে। ধরনটি নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে আমাদের আরও কাজ করা দরকার। তবে এটি নিশ্চিতভাবে উদ্বেগের, ধরনটি বেশি মৃত্যু ও সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।’
নতুন ধরন প্রথম শনাক্ত হয় গত সেপ্টেম্বরে কেন্টে। এখন ইংল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে এটি সবচেয়ে বেশি সাধারণ ধরনে পরিণত হয়েছে এবং ৫০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে উৎপাদিত ফাইজার ও অস্কফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এই ধরনে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্যার প্যাট্রিক বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া অপর দুটি ধরন নিয়ে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটির চেয়েও বেশি উদ্বেগ রয়েছে। এই ধরনগুলোতে বর্তমান আবিষ্কৃত টিকা তেমন কার্যকর না–ও হতে পারে।
কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়, নতুন ধরন আগের ধরনের চেয়ে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম এবং এটি প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি প্রাণঘাতী। উদাহরণস্বরূপ, পুরোনো ধরনে ৬০ বছর বয়সী ১ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জনের মতো মারা গেছেন। নতুন ধরনে মৃত্যুর এ সংখ্যা ১৩।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে পাওয়া নতুন ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তি যাতে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে সীমান্তের সুরক্ষায় আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তাঁর সরকার।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সরকার পর্তুগাল , দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার অনেক দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।